সিংগেল পারফিউম

লিখেছেন লিখেছেন আবু জাকারিয়া ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৭:০৯:২৯ সন্ধ্যা

গল্প#সিংগেল পারফিউম#

প্রসাধনী জিনিসগুলো খুব অপছন্দের আবিরের কাছে। বাসায় যখন টেবিলে, আলমারিতে, এখানে সেখানে বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী ছড়ান ছিটান অবস্থায় দেখত, বিরক্ত লাগত ওর কাছে।

"এগুলো এই এখানে সেখানে রেখেছে কে? আমি কিন্তু সব নিয়ে বাইরে ফেলে দেব।" বিরক্ত হয়ে বলে আবির।

আবিরের মা বলে "কে রাখবে আবার, তোর বোন রেখেছে।"

-আমি কতবার বলেছি এসব আমার টেবিলের উপর না রাখতে।

-ভুল করে রেখেছে হয়ত। আবিরের ছোট বোন সুমাইয়া (১৬) এসে বলে, কি হয়েছেরে ভাইয়া?

আবির বলে, এখানে কিছু রাখবি না, এরপর রাখলে ছুড়ে মেরে সব বাইরে ফেলে দেব।

আবিরের ছোট বোন আবিরের পড়ার টেবিলে প্রসাধনীগুলো রাখলে এভাবেই বিরক্ত হত ও। কিন্তু কখনওই ফেলে দিত না।

এখন প্রসাধনীর বিরক্ত কেটে গেছে আবিরের। শহরে এসেছে লেখা পড়া শিখতে। তাই বিরক্ত করার জন্য ছোট বোনটাও নেই। বোনের কথা খুব মনে পরে আবিরের। মনে মনে অনুতপ্ত হয়। বোনের সাথে এত বিরক্ত হওয়া, বোনকে বকাবকি করা ঠিক হয়নি তার। এতে হয়ত অনেক রেগে আছে বোনটা, মনে মনে কষ্ট পেয়েছে।

যাইহোক, পড়ার টেবিল প্রসাধনী মুক্ত। তবে আবির প্রসাধনী পছন্দ না করলেও পারফিউম খুব পছন্দ করে। পারফিউম ব্যাবহার করলে আলাদা একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসে ওর মধ্যে। লেখা পড়ায়ও ভাল করতে পারে। তাই শহরের কসমেটিকের একটা দোকানে ঢুকল পারফিউম কিনতে।

অনেক বড় একটা কসমেটিকের দোকান, হাজার প্রকার জীনিস সাজানো রয়েছে পুরো দোকান জুড়ে। একজন মেয়ে লোক দোকানে বসে আছে। সূর্যের আলো এসে পরছে তার রক্ত বর্ন ঠোটের উপর। এতে তার সুন্দর চেহারা আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। আবির সেদিকে খেয়াল করেনি। ও ঘুরে ঘুরে পারফিউম পছন্দ করছে, গন্ধ নিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কোন পারফিউমটা ভাল। হঠাৎ একটা আশ্চর্য জিনিস খেয়াল করল আবির। এত বড় দোকান, অথচ আবিরই একমাত্র কাস্টোমার। আবির কোন প্রশ্ন করলনা মেয়ে লোকটার কাছে। কিনা কি ভেবে বসে, বলাতো যায় না। হঠাৎ একটি সুন্দর গন্ধ নাকে পৌছাল আবিরের। গন্ধটা আসছে স্বাধারন একটা পারফিউমের প্যাকেট থেকে। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল আবির। কোন ব্রান্ডের নাম দেখা যাচ্ছে না প্যাকেটের গায়ে অথচ মিষ্টি একটা গন্ধ।

-এই পারফিউমটার নাম কি?

আবির মেয়েলোকটির দিকে তাকিয়ে বলল। এবার মেয়েলোকটির সুন্দর ঠোট দুটি আবিরের নজর এড়াল না।

মেয়ে লোকটি ঠোট দুটি নেড়ে বলল,

-এটার কোন ব্রান্ড নেই।

আবির অবাক হয়ে গেল। বলল, ব্রান্ড নেই মানে।

-হ্যা, এটার ব্রান্ডের কোন নাম দেয়া হয়নি।

আবিরের কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হল কিন্তু আর কোন প্রশ্ন করলনা। যাই হোক আবিরের পারফিউম পছন্দ হয়ে গেল, নাম ও ব্রান্ড ছাড়া পারফিউম।

আবির বলল, আমাকে এগুলোর পাচটা দিন।

মেয়েলোকটি বলল, পাঁচটা হবেনা, আমাদের স্টকে একটাই রাখা হয় সব সময়। একটার বেশি রাখা নিষেধ।

আবির বাধ্য হয়ে একটা পারফিউম কিনে নিয়ে আসল। কি অবাক করা বিষয়, নাম ব্রান্ড বিহীন পারফিউম পারফিউম, তা আবার একটার বেশি রাখা যাবে না! নাম নেই তাতে কি হয়েছে, আবির নিজেই পারফিউমটার একটা নাম দিয়ে দিল, সিংগেল পারফিউম। অর্থাৎ দোকানে এটা সিংগেল পাওয়া যায়।

সিংগেল পারফিউমটা গায়ে মেখে বাইরে বের হল আবির। পুরো রাস্তায় পারফিউমের সুন্দর গন্ধে ম ম করছে। লোকজন আবির কে ফলো করছে। সবাই ভাবতে লাগল, এত সুন্দর গন্ধের পারফিউম কই পেল ছেলেটা? আবির সেদিকে খেয়াল করেনা, ও নিজের নাক বরাবর হাটতে থাকে আনন্দের সাথে। হঠাৎ একটা লোক দৌড়াতে দৌড়াতে কাছে আসে ওর।

-হ্যালো ভাই কিছু মনে করবেন না, আপনার এই পারফিমের নাম কি এবং কোথা থেকে কিনেছেন?

আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

-কেন?

লোকটা বলল,

-না মানে আমিও একটা কিনতে চাই।

আবির বলে, ও তাই! পারফিউমটার নাম সিংগেল পারফিউম।

আবির লোকটাকে দোকানের ঠিকানা দিয়ে দিলে লোকটা চলে গেল। এত ভাল একটা পারফিউম ব্যাবহার করতে পেরে আবিরের আনন্দ হচ্ছে মনে মনে।

রাতে ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ পারফিউমের গন্ধে ঘুম ভেংগে গেল আবিরের। এত তিব্র আর সুন্দর গন্ধে ঘুম ভাংতেই পারে, তাই বলে ঘুমতো নষ্ট করা যাবেনা। আবির পারফিউমটা ট্রাংকে ঢুকিয়ে আটকে রাখল। এবারও গন্ধটা পাওয়া যাচ্ছে, তবে হালকা। হালকা গন্ধে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। আবির শান্তিতে ঘুমিয়ে গেল।

আবার তিব্র গন্ধে ঘুম ভেংগে গেল । আবির ট্রাংকের কাছে নাক নিয়ে গন্ধ শুকে দেখল, বাহ! কি সুন্দর গন্ধ। এখন ট্রাংটাকেই পারফিউমের ট্রাং মনে হল আবিরের কাছে। তাই বলে রাতে ঘুম নষ্ট করার মানে হয়না। আবির এবার পারফিউমটা ফ্রিজের মধ্যে আটকে রেখে ঘুমিয়ে পড়ল, ভাবল, এখন আর পারফিউমের গন্ধ আসার সুযোগ নেই।

আবির আবার ঘুমিয়ে পরল। সকাল হবার আগেই তিব্র পারফিউমের গন্ধে ঘুম ভাংল আবিরের। এবার বসে বসে পারফিউমের গন্ধ শুকতে লাগল আবির। আহা কি সুন্দর গন্ধ, কি সুন্দর পারফিউম! এবার পুরো ফ্রিজটাই পারফিউমে পরিনত হয়েছে বলে মনে হয়।

খট খট খট, দরজায় কে যেন নক করল। সম্ভত বাড়িওয়ালা হবে। এত সকালে কি চায় বাড়ি ওলা। আবির দরজা খুলে দিল।

-তোমার ঘর থেকে এত গন্ধ আসে কিশের?

বাড়িওয়ালা মেসাক করতে করতে জিজ্ঞেস করল।

আবির হাসি মুখ করে বলল,

-পারফিউমের গন্ধ, আংকেল।

-ও।

বাড়িওয়ালা চলে গেল।

পরের দিন রাত বারটার সময় আবার দরজায় নক করল বাড়ীওয়ালা।

-তোমার পারফিউমের গন্ধেতো আমরা ঘুমাতে পারছিনা বাবা। এত গন্ধ কেন?

-আমিওতো জানিনা আংকেল, পছন্দ হল তাই কিনে আনলাম। এখন ফেরত দিয়ে আসব। (আর ঝাড়ি দিয়ে আসব লাল ঠোট ওয়ালা সুন্দরী দোকানীকে।- মনে মনে বলল আবির)

-কেন বাবা, ফেরত দিবে কেন?

-কারন আমিও পারফিউমের গন্ধে ঘুমাতে পারিনা। আমার ট্রাংকে পারফিউমের গন্ধ, আমার ফ্রিজে পারফিউমের গন্ধ....

-ও, আজিব ঘটনাতো।

সকালে সিংগেল পারফিউম নিয়ে কসমেটিকের দোকানের দিকে রওয়ানা হল আবির। উদ্দেশ্য পারফিউমটা সম্পর্কে তথ্য বের করা। অবশ্য ছেলে দোকানদার হলে এসব ফালতু কাজে যেতনা আবির। লাল ঠোট সুন্দরী মেয়ে বলে কথা। পারফিউমের রহস্য জানার অজুহাতে পরিচিত হলে, দু একটা কথা বললে দোষের কি! ভাগ্য ভাল থাকলে অবশ্য ভাবও হয়ে যেতে পারে। ভাবতে ভাবতে চলে আসল আবির। কিন্তু দোকানটা দেখতে পেলনা কোথায়ও।

একটা লোক যাচ্ছে আবিরের পাশ দিয়ে।

-ভাই এখানে একটা কসমেটিকের দোকান ছিলনা?

-আরে মিয়া, পাগল হইলেন নাকি, এখানেতো জীবনেও কসমেটিকের দোকান দেখিনায়, এই এলাকায় ২০ বছর ধরে থাকি।

আবির সিংগেল পারফিউমটা বের করে লোকটাকে দেখিয়ে বলল, এটা কিনেছিলাম।

লোকটা নরম গলায় বলল, আপনি হয়ত ভূল পথে এসেছেন।

লোকটা চলে গেল। আবির হা করে তাকিয়ে রইল। ভূল পথতো হতেই পারেনা। এখানেইতো এসেছিলাম পারফিউম কিনতে, লাল ঠোট ওয়ালা সুন্দরী একটা মেয়ে...।

একটা চায়ের দোকানে এসে বসল আবির, পারফিউম কেনার দিন এই দোকান থেকেই চা খেয়েছে ও।

-ভাই এখানে একটা কসমেটিকের দোকান... একটা মেয়েলোক বসা ছিল?

চায়ের দোকানদার ঠান্ডা মাথায় বলল, নারে ভাই এখানে দুই তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোন কসমেটিকের দোকান নেই।

আবির বাসায় চলে আসল। ভাবতে লাগল পারফিউমটা কি করা যায়। এত গন্ধের পারফিউম ব্যাবহার করা ঠিক হবেনা।

পারফিউমটা নিয়ে নদীতে ছুড়ে ফেলে দিল আবির। যা সিংগেল পারফিউম, তোকে আমি চাইনা। এবার স্বাধারন পারফিউম কেনার সিদ্ধান্ত নিল আবির। দোকানে এসে একটা স্বাধারন পারফিউম কিনে আনল। কিন্তু একই সমস্যা, গন্ধ ধীরে ধীরে বেড়ে চলছে, ঠিক সিংগেল পারফিউমের মত। আবির দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল, কি পারফিউম দিলেন ভাই। এত গন্ধ ছড়ায় কেন?

দোকানদার বলল, পারফিউমেতো গন্ধ আসবেই, গন্ধের জন্যইতো মানুষে ব্যাবহার করে।

দোকানদারের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারল না আবির।

পারফিউম গন্ধের জন্য ঠিক আছে, তাই বলে এত গন্ধ। গ্রামে থাকতেও অনেক পারফিউম ব্যাবহার করেছে আবির, তাই বলে এত গন্ধ ছিলনা। আবির স্বাধারন পারফিউমটাও ছুড়ে নদীতে ফেলে দিয়ে আসল। বাসায় এসে ছোট বোন সুমাইয়ার কাছে ফোন করল।

-হ্যালো বোন আমার, কেমন আছিশ?

-হ্যা ভাল আছি ভাইয়া, তুমি কেমন আছো?

-ভাল। তুই গ্রাম থেকে একটা পারফিউম কিনে পাঠাতে পারবি?

-কেন গ্রাম থেকে কেন, ঢাকায় বুঝি পারফিউম কিনতে পাওয়া যায় না?

-যায়, তবে সেগুলো ভালনা।

-ভালনা কেন ভাইয়া?

আবির সিংগেল পারফিউমের কাহিনী সব খুলে বলল ছোট বোন সুমাইয়াকে

ছোট বোন বলল,

-তুমি এত বানিয়ে কথা বলতে পারনা ভাইয়া!

বলেই হেসে ফেলল সুমাইয়া।

আবির বলল,

-সত্যি করে বলতো বোন, তুই আমার সাথে রাগ করিশনিতো?

-কেন ভাইয়া?

-ওইযে আমি তোকে বকাবকি করতাম...

(সমাপ্ত)

'' ★*'''''

"★*

বিষয়: সাহিত্য

১৪৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File